Tuesday 13 December 2016

আজিজ আহমেদের গল্প


আমারো পরাণো যাহা চায়


বাবা আমাকে দুটো জায়গার অপ্‌শন দিয়েছিলেন। ডারবান অথবা কলকাতা। আমি কলকাতা বেছেছিলাম অনেকদিন পর আমি আমার মনের কথা শুনেছিলামমনে হচ্ছে, দ্বীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ভগবান আমার স্বপ্ন পূরন করেছেন। রাতের নিস্তব্ধতা চারিদিকে এখনপাশের জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসে ঢুকছে আমার ঘরে। আজ প্রায় কুড়ি বছর পর কলকাতা শহরে প্রথম রাত আমার। আমার বাংলার ব্যাপারই আলাদা। ঘুম আসছে না কিছুতেইমানুষ যখন খুব খুশি হয়, তখন বোধহয় এমনটিই হয়। আসলে গ্ল্যাসগোতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। স্কটিশদের ভীড়ের মাঝে নিজেকে ভীষণ বিচ্ছিন্ন লাগতো। মনে হতো আমি কারাবাসে আছি। মা বাদ দিয়ে বাবা আর দাদা নিজেদেরকে আপাদমস্তক ইংরেজ বানিয়ে নিয়েছে। আমার ভাল লাগতো না ওসব কিছুই, কলকাতার জন্য মন কেমন করতো।

বাবার উপর আমার আর মায়ের অনেক ঋণ আছে। উনি আমাদের জীবনকে সামলে দিয়েছেন। জন্মের আগেই আমার নিজের বাবা মারা গিয়েছিলেন। উল্টডাঙায় দাদুর বাড়িতে থাকতাম। মা এক গানের স্কুলে বাচ্চাদের গান শেখাতো। ভর্তি হয়েছিলাম উল্টডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তারপর মায়ের এক বন্ধবীর মামাতো ভাইয়ের সুবাদে মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে বিস্ত্রীক এক ধনী বাঙালীর সাথে থাকেন গ্ল্যাসগোতে। আমার চেয়ে একটু বড় ওনার একটা ছেলেও আছে। সেই থেকে বাবা-মার কছে ছিলাম বিদেশেআর বুকের মধ্যে বয়ে বেড়াচ্ছিলাম শিকড় ছেঁড়ার এক যন্ত্রণা।
বাবার একটা মিউজিক কম্পানী আছে। বেশ বড়। বিস্তৃত করেছেন ওনার বিজনেস পৃথিবীর অনেকগুলো শহরে। দেশের প্রতিষ্ঠীত এবং বিখ্যাত গায়কদের গান রিমিক্স করে আমাদের কম্পানী। বাবা আর দাদা মিলে ব্যবসাটা ভালই চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু আমি বুঝতে পারি না এর কিছুই। আমার উপর দায়ীত্ব দিয়ে বাবা আমায় শিখিয়ে চলেন সবসময়। কিছুদিন যাবৎ ওনার ডারবান আর কলকাতার প্রজেক্টটা ভাল চলছিল না। পরপর তিনটে অ্যালবাম ফ্লপ হয়েছেতাই বাবা আমায় কলকাতা পাঠিয়েছেন, এখানকার বিজনেস সামলানোর জন্য। আমি কোনো প্রশ্ন না করে চুপুচাপ চলে এসেছি এখানে।
গ্ল্যাসগোতে মা ইন্ডিয়ান স্কুল অফ মিউজিকে শিক্ষকতা করে। রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখায় ওখানকার বাঙালীদের। খুব স্বাভাবিক ভাবেই মা রবীন্দ্রনাথকে তার ঠাকুর হিসেবে মেনে নিয়েছেমায়ের ঘরে রবী ঠাকুরের এমন কোনো বই নেই যা উনি পড়ে নি। বিদেশের মাটিতেও বাংলাকে বাঁচিয়ে রেখেছে মা। মায়ের কাছ থেকে কিছুটা অভ্যাস আমিও পেয়েছি। সময় পেলেই কবিতা, গল্প কিম্বা রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে সময় কাটাই।

এক সপ্তাহ হয়ে গেছে কলকাতায় এসেছিঅফিসের কোনো কাজ করি নি। করার ইচ্ছাই নেই। তিলোত্তমা কলকাতাকে ভাল করে দেখার ইচ্ছা করছে একবার। গঙ্গার পাড়, প্রিন্সেপঘাট, ভিক্টোরিয়া, হাওড়াব্রীজ, দক্ষিনেশ্বর, নন্দন, একাডেমী, ময়দান, ধর্মতলা সব ঘুরেঘুরে বেড়াচ্ছি এখন। উল্টডাঙায় আমার স্কুলে গিয়েছি একবার। বদলে গেছে সবকিছু, ছোট্ট স্কুল এখন দুতলা হয়ে গেছে। আমার ছেলেবেলাকে দেখে এসেছি আরও একবার।
বাবার পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের পরবর্তি বাংলা অ্যালবাম রিলিজ হবে এইমাসেইরবীন্দ্রসঙ্গীতকে রিমিক্স করে। সামনেই আসছে পঁচিশে বৈশাখ। তার আগেই যাবতীয় সব কাজ সেরে অ্যালবাম মার্কেটে ছাড়তে হবে। অফিসের সবাই ধুমধাম কাজ শুরু করে দিয়েছে আমার আদেশ অনুযায়ী। অনেক বেশী টাকা দিয়ে এইবার নামী এক গায়ককে মনোনীত করা হয়েছে। সফল আমাদেরকে হতেই হবে। স্টুডিওতে সকলেই ব্যস্ততার সাথে কাজ করছে এখন। শুধু আমি চলেছি আমার গতিতে। কিছু পূরানো বন্ধু-বান্ধবদের সাথে প্রতিদিন আড্ডা মারছি কফিহাউসে বসে। বাংলা নাটক দেখছি গিরিশ মঞ্চে। কলেজস্ট্রিটের গলিতে ঘুরে ঘুরে রবী ঠাকুরের বই কিনছি। রাতে বাবা-মাকে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি, ‘আমি ভাল আছি এখানে’।

বিশ্বভারতীর কপিরাইট শেষ হয়ে যাওয়ার পর, রবীন্দ্রসঙ্গীতকে নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে অনেকদিন আগে থেকে। নতুন জেনরেশনের সামনে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে নতুন সুরে, নতুন রুপে তুলে ধরার অপচেষ্টায় আর কারও আপত্তি না থাকলেও আমার আপত্তি আছে। বাবা আমার কথা শোনেন নি। আমাদের অ্যালবাম তৈরী। সামনের সপ্তাহে রিলিজ হবে।
কয়েকদিন পর পঁচিশে বৈশাখখুব গরম পড়েছে। কলকাতার আবহাওয়ায় একটু অসুবিধা হচ্ছে বটে। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। প্ল্যান অনুযায়ী হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে গেলাম সকাল সকাল। আজ বোলপুর যাবো। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে। কখোনো দেখি নি আমি। অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল। হাওড়া থেকে সকাল দশটা চল্লিশে ছাড়ে কবিগুরু এক্সপ্রেস। জানালার ধারে একটা সিট নিয়ে বসে পড়লাম। কলকাতার বাস-ট্রাম-ট্রেন-রিক্সা বেশ ভালই লাগছে। ধিরে ধিরে ট্রেনে ভীড় বাড়তে থাকলোআমি দেখছি জানালার বাইরে আমার সোনার বাংলাকে। ভীড়ের মাঝে আমাদের কামরায় ঘুরে ঘুরে ফিরছে কতকিছুর ব্যাপারী। মশলামুড়ি, বাদামছাপা, টাইগার বাম, আমলকি কিম্বা লেবু লজেন্সসবাই নিষ্ঠার সঙ্গে করে চলেছে তাদের ব্যবসা। আমিও তো করছি একটা ব্যবসা। সঙ্গীতের ব্যবসা। কিন্তু পারছি না কেন।
ধিরে ধিরে ট্রেন একটু খালি হতে থাকলো। বোলপুর আসতে আর বেশি বাকি নেই। হঠাৎ আমার কানে আসছে এক রবীন্দ্রসঙ্গীতের আওয়াজ। কেউ গাইছে। ক্রমশ্য আওয়াজটা আরো স্পষ্ট হতে থাকলো। খালি গলায় এমন সুন্দর রবীন্দ্রসঙ্গীত আমি আগে শুনি নি কখোনো। অসাধারন কন্ঠস্বরে গাইছে লোকটা-
              আমার পরান যাহা চায়...তুমি  তাই, তুমি তাই গো...
              তোমা ছাড়া আর জগতে...মোর  কেহ নাই, কিছু নাই গো...
              আমার পরান যাহা চায়... তুমি তাই, তুমি তাই গো...
লোকাটা আমারদের কামরায় এসে পৌঁছালো। তাকিয়ে দেখলাম মধ্যবয়স্ক একটা লোক। ভিক্ষে করছে। ডান হাতটা কাঁধের কাছ থেকে কাটা। বাম হাতে একটা পাত্র। সবাই পয়সা দিচ্ছে তাতে। আমি পটেক থেকে একটা দশ টাকার নোট লোকটার বাটিতে রাখলাম। একবার আমার দিকে তাকালো সে। তারপর পুরো গানটা গাইতে গাইতে সামনের কামরার দিকে চলে গেলো। আমি কিছুক্ষণের জন্য চুপচাপ হয়ে গেলাম। মাথার মধ্যে সেই অবাক করা ঝড়টা চলছে এখনও। বিনা চর্চায়, বিনা রেওয়াজে একটা মানুষের গলা এত ভাল কি করে হতে পারে। দুরের কামরা থেকে এখনও আওয়াজ আসছে-আমার পরান যাহা চায়....
কিছুক্ষণ পর বোলপুর এসে গেলো। আমি নেমে পড়লাম। স্টেশনের চায়ের দোকানে মাটির ভাঁড়েতে চায়ে চুমুক দিলাম একটা। হঠাৎ সামনের বেঞ্চটাতে চোখ গেলো, দেখলাম সেই হাতকাটা ভিখারীটা বসে আছে। গিয়ে বসলাম ওর পাশে। নাম জিজ্ঞেস করলাম। কথা বললাম অনেকক্ষণ ধরে। তারপর একটা ট্রেন আসতেই লোকটা চলে গেল। আর আমি চললাম শান্তিনিকেতনের পথে।

আমাদের রবীন্দ্রসঙ্গীতের রিমিক্সড অ্যালবাম যথারীতি রিলিজ হয়ে গেছে গত সপ্তাহে। বাবার কম্পানীর মুখ রক্ষা করার তাগিদ আমার। কিন্তু যা হবার তাই হলো। যাদের শোনার তারা শুনলো, বাকিরা নিলো মুখ ফিরিয়ে। সমালোচনা হলো, খবরের কাগজের হেডিং হলো। আর তার সাথে হলো বাবার পয়সা ধংস্ব। আরও একটা ফ্লপ অ্যালবাম। আমার কপালে জুটলো তিরস্কার। দাদা ফোনে বোঝালো প্রোডাক্ট মার্কেটিংএর স্ট্র্যাটেজি। আমি ওদেরকে কি’করে বোঝাই, বিজনেস আমার দ্বারায় যতটুকু হয় আমি ঠিক ততটুকুই করতে পারি। তার বেশি নয়।

আজ সারাদিন শুধু ভেবেছি। বাবা-মার কথা ভেবেছি। দাদার কথা ভেবেছি। কলকাতায় আমাদের মিউজিক কম্পানীর কথা ভেবেছিবাবা এখনও হাল ছাড়েন নি। পরের অ্যালবামের কাজ আমার নিজের পছন্দের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। কলকাতায় পার্মানেন্টলী থাকা এবং নিজেকে প্রমান করার একটা শেষ চেষ্টা আমার করা উচিত। এবারের অ্যালবাম হবে আমার পছন্দের গায়কের সাথে। সারারাত মাথার মধ্যে এক অদ্ভুদ প্ল্যান ঘুরছিল। সকাল হতেই জানি না কেন, হাওড়া স্টেশনে গিয়ে বসে পড়লাম কবিগুরু এক্সপ্রেসে। কোনো একজনের জন্য উদ্বিগ্ন অপেক্ষায় জানালার ধারে বসে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতে পারি নি। হঠাৎ ঘুম ভাঙলো সেই গানের আওয়াজে- আমারো পরানো যাহা চায়...তুমি  তাই, তুমি তাই গো...


------সমাপ্ত------

Monday 5 December 2016

সৌভনিক চক্রবর্তীর কবিতা গুচ্ছ




আমার গ্রাম


আমার বুকের ভেতরে একটা গ্রাম বেঁচে আছে।
শহরের ধুলো বালি এমনকি কংক্রিটের আবর্জনা বাঁচিয়েই।
আমার শরীরের ভেতর বয়ে চলেছে তিরতিরে স্রোতের আত্রেয়ী নদী।
একটা ধুলো মাখা পথ, রঙ্গন ফুলের ছায়া এমনকি একটা একতারার বাউল –
ওরা  প্রতিদিন আসে আমার হৃদির হাটে।
রাত বাড়তে বাড়তে স্পর্শ করে তারাদের –
আখড়ায় আমার মন বাউল –
“ওরে মন হবেই হবে”
আমার ছনের চাল বেয়ে নেমে আসে কনক ধানের জ্যোৎস্না।
আমি মাটির দাওয়ায় বসেই স্বপ্ন দেখি।
জামগাছের আড়ালে আমার গ্রামটা লুকোচুরি খেলে।

আমার বুকের মাঝে যে গ্রামটা আছে ?
তার মাঝ বরাবর নদীর পার ঘেঁষে আমি হেঁটে যাই।
থকথকে সকালের সূর্যে – আমার গ্রামটাই পাল্টে যায়।
আমি রূপকথার মত বুনেদি নাম না জানা এক একটা বীচ।
আমি দুচোখ দিয়ে দেখি আমার ছেলেবেলা –
হাতে, কাঁটা ঘুড়ি নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে আলপথ ধরে।

আমার বুকের মাঝে যে গ্রামটা আছে –
তার বটবৃক্ষের ছায়ায় ঘুমিয়ে থাকে একটা অন্ধ কুকুর।
আড়াইডাঙার মাঠ থেকে গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে উঠানের কোণায় এসে দাঁড়ায়।
ন’কাকিমা কলাপাতায় তুলে রাখে এঠোকাঁটা এবং উচ্ছিষ্ট ভাত।
ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা ধুলো বালি –
বারিন কাকার কুনকী মাপা বিন্নি ধানের খই
সোনা পিসিমার উঠান জুড়ে ডালের বড়ি...
আর আমি, বাবার চোখ দিয়ে দেখি –
আমার সন্তান -
“স্বগৃহে পুজিত মূর্খা, স্বগ্রামে পুজিত প্রভু
স্বদেশে পুজিত রাজা, বিদ্বান সর্বত্রই পুজিত”

আসতে আসতে ঘুম নেমে আসে চোখে
ঘুমের চাদর গায়ে - শহর বাঁচিয়ে
আমার গ্রাম বিস্তার করতে থাকে আমার বুকের অলিন্দে।



বেশ্যা


আস্তে আস্তে কক্ষ পাল্টাছে পৃথিবী।
চেনা পথ ছেড়ে ফিরে আসছে সাতফুট বাই সাতফুটের ভেজা ঘরে ।
উন্মত্ততার আস্তিনে লুকানো হাহাকার
বারি খেয়ে ফিরে যায় পলেস্তারা খসা দেওয়ালে।
আসলে মনের প্রতিটা স্তরও খসে পড়ছে 
শরীর থেকে বেরিয়ে আসছে আঁশটে গন্ধ ...
সম্পর্ক গুলো বড় শিথিল

নিওন আলোর নীচে পণ্য ! নিওন আলোর নিচে পর্ণ
একই শব্দের ভিন্নার্থক ।

প্রাগ ঐতিহাসিক সভ্যতা থমকে দাঁড়িয়েছে ।
এখানের পৃথিবী আলাদা !




বিপদসীমা


বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে প্রেম
থারমফ্লাক্সের উষ্ণতায় ঘনীভূত দুটি সত্ত্বা;
একে মৃত্যু দুয়ে ভালোবাসা !
নির্ধারণ করাটা কতটা সমুচিত
সে আলোচনা বা পর্যালোচনা বরং তোলা থাক
আলমারির সিফন শাড়ীর ভাঁজে ।
মুখোমুখি দুটো ঠোঁটের মাইল মিটারে
যতিচিহ্ন ! অবান্তর প্রশ্ন কেন হে ?
এখানে কি কেউ মানুষ নেই ?
রেজাউল – তাহের – বন্যারা
ঘুমিয়ে রয়েছে স্রোতস্বিনী কবিতায় !
নুরি পাথর কুড়িয়ে নেওয়া যাক
আসন্ন মৃত্যুর লিপ্সায় !
তবুও প্রেম, বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে
একে ভালোবাসা দুয়ে মৃত্যু !
সাইনবোর্ড মুছে দেওয়া হল ।।



উপহার


তোমার দেওয়া উপহারের দিকে চোখ ফেরাতেই
ভেসে আসল আতরের মন মাতানো গন্ধ
     ছায়াপথ ধরে দু’পা এগোতেই রঙমশাল...
চাঁদের জ্যোৎস্নায় বিছানা পাততেই
এক ঝাঁক সবুজ জোনাকি - স্বপ্নের তারামহলে...
     ঘন কুয়াশার চাদর জড়িয়ে নিলো বুকের উত্তাপ।

ঘাসের সংসারে - সবুজ সুখী গৃহকোণ
আর মাত্র দু’পা এগোলেই ফলসা গাছের আডালে একটা গোটা জলপ্রপাত
তুমি বললে –
          আজ জন্মদিন
     চলো, পা ডুবিয়ে স্বর্ণকমল ফোঁটা দেখি !




বিসর্জন


জলে ঝাঁপিয়ে পড়তেই ভেসে উঠল –
হলুদ পারের লাল শাড়ীর টুকরো
ব্লাউজের ছেঁড়া হাতা -  হাতের কঙ্কণ – নাকের নথ
হাড় – পাঁজর এবং নিতম্বের কিছু অংশ।

আরও কিছুটা গভীরে যেতেই - বুদবুদ করে ভেসে উঠলো
রক্তের মত গাঢ় লাল রং।
একটা ডুব দিতেই নাকে ভেসে আসলো
শরীর চেনা পচা ফুল বেলপাতার গন্ধ।

একটা মাটির শরীর মাটিতে মিশের যাওয়ার আগে
যেভাবে ঘটা করে বিসর্জন হয়, অথবা
রাতের অন্ধকার, দিনের আলোর মত উজ্জল হয়ে থাকে
গ্যাস লাইটের আলোয়।

সেভাবেই বিসর্জন হয় ।
প্রতিদিন বিসর্জন হয় নাম না জানা কত...
পবিত্র গঙ্গা ছিঁড়ে খায় এক একটা শরীর।



বড় দেরি করে এলে


বহুদিনের ওপারে দাঁড়িয়ে দেখা হল
তবে যে কথা হওয়ার ছিল –
তাও ফুরিয়েছে ওপারে দাঁড়িয়েই।
গন্তব্যের  অভিমুখে এসে পথ ছেড়ে দিলেছিল –
                        তুমি না আমি !
কালো ফ্রেম, কাঁচাপাকা দাড়ি
              অনেকটা সময় খরচ হয়ে গেছে
     বাক্সের ভেতর যৌথ স্বপ্নের
              ফুলফুল সোয়েটার
                   কুরুশকাঁটা,
                   আর চোদ্দটা বছর।
সেই তো এলে, বড় দেরি করে এলে। 




চারকোন আর ছোটো ছোটো নুড়ি কথা


প্রেম ভাঙার মরসুমে
কিছু বস্তাপচা অনুভূতি ছুঁয়ে গেল।
টার্বাইনের চাকায় ভেসে গেল চোরাস্রোত
সে কথা কালজানিও গোপন করেনি।

মিশরীয় সভ্যতার পুনঃখননে উঠে এলো
প্রাগঐতিহাসিক প্রেম প্রত্নতত্ত্ব
বালি ভাস্কর্যের আঙুল ফস্কে হঠাৎ জীবন্ত
ইতিহাস খোচিত কিংবদন্তী ।

ছোটো ছোটো নুড়ি পাথরে আত্মগোপন করা
নান্দনিক অনুভূতির পিঠে পুরু শেওলা
মৎস্যগন্ধার কুমারিত্বে প্রশ্নচিহ্ন বরং থাক
ইতিহাসে ফিরে আসা যাক।

ফ্রয়েডিও প্রেমের নিষিদ্ধ শুদ্ধাচারন কেন ?
রবি বাউলে ফিরে দেখা যাক প্রেম পর্যায়
মাদ্রির সহমরণের আগুনে বরং ফিরে আসুক
প্রেম ভাঙার মরসুম।।

সীতার অগ্নিপরীক্ষা সর্বজনবিদিত
ওটা স্বাভাবিক বা সামাজিক , মেনে নিতে হয়
এবার দুলকি চালে কেপে উঠতে পারে পায়ের তলার মাটি
কারণ,আমি রামের পৌরষত্বে প্রশ্ন তুলছি।।



কাঙালপনা


এখন যদি এমন এক বৃষ্টি হত
ঘর জানালা দুয়ারটাকে ভিজিয়ে দিয়ে
অন্যরকম মেঘলা আকাশ
তোমার জন্য প্রেম জমিয়ে

বৃষ্টি হত আমায় নিয়েই ওতপ্রোত
রাত জাগা সেই গানের খাতায়
তিস্তা তখন অন্যরকম নাচের তালে,
অন্যরকম খরস্রোতে বৃষ্টি হত।

যদি এমন একটা মেঘলা আকাশ
আমায় দিতে; হঠাৎ করে ভীষণ রাগে -
তোমায় আমি সত্যিকারের
ভিজিয়ে দিতাম সবার আগে।

বৃষ্টি তোমার ছুঁইয়ে যেত
কপাল থেকে  স্বপ্ন মূলে
বৃষ্টি তখন তোমার ঠোঁটের ,
দুই বিনুনি মাথার চুলে

বৃষ্টি যদি সত্যি তখন এমন হত;
ভীষণ দামী সত্যি যেন হিরের কণা
প্রেমের মত বৃষ্টি নিয়ে তোমার জন্য
দেখতে আমার হঠাৎ কেমন কাঙালপনা।